কলকাতা 

মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি : আলিয়ার পড়ুয়ারা দুমাস ধরে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছে , মুখ্যমন্ত্রী এবার অন্তত নজর দিন

শেয়ার করুন

বুলবুল চৌধুরি : আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বামফ্রন্ট সরকার তৈরি করে গেছে এটা যেমন বাস্তব ঠিক তেমনি এটাও বাস্তব আলিয়াকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক উদ্যোগ এবং ভালবাসা ছিল । তাঁর নির্দেশে রাজারহাটে আলিয়া ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে , পার্ক সার্কাসেও ক্যাম্পাস দেখার মতো । তালতলাতেও ভাল ক্যাম্পাস আছে । সব কিছু মিলিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজে আলোর বর্তিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে । বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের ছেলেমেয়েদের কাছে আলিয়া এখন উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে । এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনি নিঃশ্চয় অবগত আছেন বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভাল অবস্থায় নেই । কেন নেই ? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন । মানবিক মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপনার দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে । কিন্ত আলিয়ার পড়ুয়ারা প্রায় দুমাসের বেশি সময় ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করে চলেছে তাদের নানা দাবি দাওয়া নিয়ে । কিছু ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করছেন, আলিয়াতে কোনো সমস্যা নেই । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের ব্যর্থতার জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে । উনি পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছে একটা মহল ।

Advertisement

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমরা সংবাদপত্র মারফত জানতে পেরেছি উপাচার্য নাকি আপনার কাছে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যদি উপাচার্যের জন্য সমস্যা তৈরি হয় তাহলে তাঁর পদত্যাগে আপত্তি কেন ? মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দ্রুত দূর করুন । না , হলে সমস্যা গভীরে চলে গেলে তখন কিছু করার থাকবে না । আমরা বাংলার জনরব এর পক্ষ থেকে যে অন্তঃতদন্ত চালিয়েছিলাম তাতে স্পষ্ট হয়েছে আলিয়ার সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে ইগো প্রবলেম । এক আমলার সঙ্গে উপাচার্যের ইগোর লড়াইয়ে বলি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। আলিয়ার সমস্যার জন্য সংখ্যালঘু দফতর এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কেউ-ই দায় এড়াতে পারবেন না । সকলেই দায়ী একথা না বলে বলা যেতে পারে সকলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার জন্যই আজ ছাত্ররা আন্দোলনের পথে ।

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনাকে এই বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ বিশ্বাস করে , আপনার প্রতি তাদের অগাধ আস্থা রয়েছে।সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজ আপনাকে উজাড় করে সমর্থন দিয়েছে । তাই তাদের এই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়াও আপনার নৈতিক দায়িত্ব। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই আলিয়ার পড়ুয়ারা ৬০ দিনের বেশি অবস্থান বিক্ষোভ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা প্রস্তাব এখনও পাঠানো হয়নি । এতে দফতরের অফিসারদের কোনো দায় নেই এটা যেমন সত্য একইভাবে ছাত্রদের লাগাতর এই আন্দোলনের প্রভাব সমগ্র মুসলিম সমাজে পড়ছে । যাতে আপনার ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে । এর সুদূর প্রসারি ফল আপনার দলের পক্ষে খুব মঙ্গলজনক হবে না ।

তাই আলিয়ার পড়ুয়াদের আন্দোলনের সব দাবি মানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই তবে সরকারে উচিত অবিলম্বে আলোচনার দরজা খুলে দেওয়া। সবশেষে বলব মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনি এই রাজ্যের অভিভাবক।তাই আলিয়ার সমস্যার সমাধানে আপনি নিজে এগিয়ে আসুন। বাংলার সংখ্যালঘুরা আপনাকে শুধু বিশ্বাস করে না, আলিয়া নিয়ে আপনার হস্তক্ষেপ চায়। মনে রাখতে হবে আলিয়ার সমস্যার সমাধান যত দেরি হবে ততই সংখ্যালঘু সমাজে সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে । তাই আলিয়ার স্বার্থে প্রয়োজন হলে উপাচার্যকেও সরে যেতে বলতে পারেন আপনি। উপাচার্য যদি দায়ী না হন, সমস্যার পেছনে কারা তাদেরকে খুঁজে বের করুন ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নিয়ে বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিকে সামনে রেখে যারা আলিয়ায় সমস্যা তৈরি  করেছেন তাঁদের প্রতিও আপনাকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে ।

আমাদের প্রত্যাশা সংখ্যালঘু সমাজের একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও উন্নতমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ